ঘুষখোরের গল্প

 অফিসে যাওয়ার আগ মুহূর্তে, আমার স্ত্রী যখন জিজ্ঞাসা করলো আমি তার ছোট বোনের বিয়েতে কি উপহার দিবো, তখন আমি বললাম, “তুমি তোমার পছন্দমতো কিছু একটা কিনে দিও। 😊”


আমার স্ত্রী কিছুটা রেগে বললো, "কিছু একটা মানে? তুমি জানো দুলাভাই কি দিচ্ছে? এক লাখ বিশ হাজার টাকা দিয়ে সোনার কন্ঠহার! 


আমি বললাম, "তাহলে এখন আমার কি করতে হবে? 

আমার স্ত্রী হেসে বললো, "আমি আমার বোনকে দুই লাখ টাকা দিয়ে সীতা হার কিনে দিবো। 

কথাটা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম, "এতো টাকা! 

আমার স্ত্রী মুখটা মলিন করে বললো, "দুলাভাই যদি ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়ে এতোটাকা দিয়ে উপহার দিতে পারে তাহলে তুমি ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়ে কেন পারবে না? যদি কম দামের উপহার দাও তাহলে বাপের বাড়িতে আমি মুখ দেখাতে পারবো?


আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে। অফিস থেকে আসার পর তোমায় টাকা দিচ্ছি। 

কথাটা বলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। 🚶‍♂️

অফিসে এসে মরহুম সাহেবের ফাইলটা ভালো করে দেখে বললাম, "আপনার তো দেখছি কাগজপত্রের কিছুই ঠিক নেই। আমি এই প্রজেক্টে সাইন কিভাবে করি বলেন তো? 🤨"


মরহুম সাহেব মুচকি হেসে বললো, "স্যার, আপনি এত বড় অফিসার। কিছু তো ফাঁক ফোকর আছে সাইনটা করে দেওয়ার জন্য। একটা কমলের খোঁচার বিনিময়ে আপনিও না হয় লাখ তিনেক টাকা পেয়ে গেলেন। 💸" কথাটা বলে মরহুম সাহেব টাকাগুলো টেবিলের উপর রাখলেন।


আমি মরহুম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম, "আপনি কি আমায় ঘুষের অফার করছেন? 😠"


মরহুম সাহেব জিহ্বে কামড় দিয়ে মুচকি হেসে বললো, "না না স্যার, একদম না। টাকাটা আমি আপনাকে উপহার সরূপ দিচ্ছি। আপনি ভাবীকে নিয়ে থাইল্যান্ড গিয়ে ৩ দিনের একটা ট্যুর দিয়ে আসলেন। 🏖️"


আমি টাকা গুলো ড্রয়ারে রেখে মুচকি হেসে বললাম, "আপনি তো দেখছি পাকা খেলোয়াড়। ঠিক আছে, আমি ফাঁক ফোকর খুঁজে কাল সাইন করে দিবো। 🤥"


মরহুম সাহেব চলে গেলে আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, যাক শ্যালিকাকে সীতা হার কিনে দেওয়ার টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলো। এমন সময় কাবিল নামের একজন কলিগ আমার রুমে আসলো। সে বললো, সে চাকরি থেকে রিজাইন নিতে চায়। আমি অবাক হয়ে বললাম, "তুমি এতো ভালো একটা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইছো? তুমি জানো এই চাকরির জন্য কত মানুষ দিন রাত পরিশ্রম করছে? 😮"


কাবিল মুচকি হেসে বললো, "স্যার, এই চাকরি করলে হয় আমাকে ঘুষ খেতে হবে, না হয় রাস্তায় মরে পড়ে থাকতে হবে। আমি অসৎও হতে পারবো না, আর রাস্তায় মরে পড়ে থাকতে চাই না। তাই চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছি। 😔"


কথাটা শুনে আমি কিছুটা খোঁচা দিয়ে কাবিলকে বললাম, "আমার জানা মতে আপনি আমাদের সেক্টরে সবচেয়ে বেশিই ঘুষ খান। সেই আপনি কবে থেকে সৎ হলেন? 🤨"


কাবিল আবারও মুচকি হেসে বললো, "যেদিন থেকে বুঝলাম আমার পাপের ফল আমার আপনজনরা ভোগ করছে। আমি প্রথম যেদিন ১০ হাজার টাকা ঘুষ খাই সেদিন বাসায় গিয়ে শুনি আমার ছেলেটার পা ভেঙে গেছে। 😢 দ্বিতীয় বার যখন ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খাই, তখন জানতে পারি আমার স্ত্রীর জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। 😔 আর তৃতীয় বার যখন ১ লাখ টাকা ঘুষ খাই, তখন গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন আসে আমার মা মারা গেছে। 😭 তারপরই আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুলটা। 😞”


চলে যাবার আগ মুহূর্তে কাবিল আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "স্যার, আপনি অবৈধভাবে যদি ৫ টাকা ইনকাম করেন, উপরওয়ালা আপনার থেকে বৈধভাবে ২০ টাকা কিভাবে যে কেড়ে নিবে, আপনি বুঝতেই পারবেন না। 😟”


কাবিল চলে গেলে আমি ওর কথাগুলো একটু চিন্তা করলাম। 🤔


বাসায় আসার পর আমার স্ত্রী যখন আমার কাছে টাকা চাইলো, তখন ওর হাতে আমার বেতনের টাকাটা তুলে দিয়ে বললাম, "এইখানে ৪৫ হাজার টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে তুমি বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, পানির বিল, কারেন্ট বিল দিবে, বাজার খরচের টাকা আলাদা করে রাখবে, হাত খরচের টাকা আলাদা করে রাখবে। আর চিকিৎসা বাবদ কিছু টাকা জমা রাখবে। সব কিছুর পর যদি কিছু টাকা বেঁচে থাকে, সেই টাকা দিয়ে বোনকে উপহার কিনে দিবে। 💸"


আমার কথা শুনে আমার স্ত্রী অবাক হয়ে বললো, "সব কিছুর পর তো হাতে দুই হাজার টাকাও থাকবে না। আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে বোনকে উপহার কিনে দিবো? 😟"


আমি রাগী চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললাম, "সংসারের সব খরচ চালানোর পর তোমার স্বামীর হাতে ২ হাজার টাকাও থাকে না আর তুমি কোন সাহসে বলো তোমার বোনকে দুই লাখ টাকা দিয়ে সোনার হার কিনে দিতে? 😡"


বউ তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, "বাপের বাড়ি মুখ দেখাবো কি করে? 😭"


আমি আরো রেগে বললাম, "মুখ দেখাতে না পারলে বোরকা পড়ে বসে থেকো। এখন কান্না বন্ধ করে আপাতত আমার সামনে থেকে যাও, তা নাহলে কান গরম করে ফেলবো। 


বউ কান্না করতে করতে চলে গেলো আর আমি ভাবতে লাগলাম, কাল মরহুম সাহেব আসলে উনার কানটা গরম করে টাকাগুলো ফিরত দিতে হবে। 


এভাবেই জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষায় আমরা নিজেদের সৎ থাকা আর দায়িত্ব পালন করার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাই। বাস্তবতা মাঝে মাঝে কঠিন হতে পারে, কিন্তু সততার মূল্যে সুখী হওয়া সম্ভব। 


                      --- **** (সমাপ্ত)  ****---

Comments

Popular posts from this blog

পিচ্ছি কালের গুন্ডি বউ (পর্ব:-১ )

ফারাক্কা ব্রীজ এর ইতিহাস

বুক ফাটানো গল্প (পর্ব_ ৩)