বুক ফাটানো গল্প (পর্ব _২)
তন্নী তনু
"কলিং রাফি"।
আমি ফোন ধরলাম না। কয়েকবার ফোন বাজলো। রাত দশটায় মেসেজ এলো। মেসেজ ওপেন করে আমি ঘেমে উঠলাম।
মেসেজ ওপেন করলাম। সেখানে লেখা ছিলো,
-- প্লিজ বেলকুনিতে আসো। আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি তখন তরতর করে ঘামছি।কারণ বাবা বাসার নিচে গেছে পাঁচ মিনিট আগে।রাফির এই বাসার নিচে আসা নতুন কিছু নয়।এর আগে অনেক রাতেই আমি আর রাফি ফোনে কথা বলেছি। সে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থেকেছে আর আমি বেলকুনিতে।কিন্তু সেদিনের রাফির পরিচয় ছিলো শুধু একজন পুরুষ।তাকে কেউ চিনতো না।তবে আজ রাফির অন্যে একটি পরিচয় আছে।ও অনিমার হাজব্যন্ড। আমার বাবা মা তাকে এই পরিচয়েই চেনেন।সুতরাং এতো রাতে আমার বাসার নিচে আমার বান্ধবীর বরকে দেখে অবশ্যেই বাবা সহজ ভাবে নিবেন না। মাথা কাজ করছিলো না থম মেরে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। অজানা আতঙ্কে আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম বারবার ।যে মানুষটা কয়েকটা দিন আগে লুকিয়ে বিয়ে করলো।আমাকে মসলার মতো পিষে পিষে এখন এসেছে আমার বাসার নিচে ঢং করতে। ঢং এরও তো লিমিট আছে। যন্ত্রণায় যন্ত্রণায় জর্জরিত স'র্বা'ঙ্গ আমার। তাকে সামনে থেকে দেখার মতো অসহনীয় য'ন্ত্রণা অবশ্যেই দুটো হবে না।তার সামনে গিয়ে আমি কি বলবো।কোনো ভাষা নেই আমার। ঐদিকে ফোনের উপর ফোন বেজেই চলেছে।আমার উপর দিয়ে যে ঝড় তুফান গিয়েছে যার জন্য। তার সাথে ফোনে দু'টো কথা বলার মতো শক্তি আমার নেই। যারা এই পরিস্থিতিতে পরেছেন তারাই বুঝবেন। যে মানুষটা প্রতারণা করে সেই মানুষের স্বর আর তার মুখোমুখি হওয়া কতো বেদনার।
অনেক ভেবে চিন্তে কাঁপা কাঁপা হাতে রিপ্লাই করলাম,
-- আমি বাসায় নেই। অন্যদিন দেখা করি?
-- রাগ করেছো সোনা? প্লিজ একটুখানি দেখেই চলে যাবো। তোমাকে না দেখলে আমার ঘুম হয় না।
আমি মেসেজ পড়ে শিহরিত।নাটকবাজ কোথাকার। কথায় মনে হচ্ছে কিচ্ছু হয়নি। সব আগের মতোই আছে। তবে যে পোড়া পুড়েছি। তাতে আমার ভিতরে ঘা ধরে গেছে। এ ঘায়ের জ্বালা কোনো ছলছুতো, মিষ্টি কথাতে মিটবে না। আমি শুধু আজকে বাঁচার জন্যে তালমিলিয়ে রিপ্লাই দিলাম।
--তুমি তো বলেই গেছো নেটওয়ার্ক প্রবলেম হতে পারে। রাগ করবো কেনো? তুমি নেই বলেই আমি আন্টির বাসায় এসেছি।এখন চলে যাও। অন্য দিন দেখা করবো।
ও রিপ্লাই দিলো।
--কাল অবশ্যেই দেখা করবে। আমার যেনো আবার আসতে না হয় এখানে।
আমি সেদিন চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। কাল কি হবে? কাল যদি দেখা না করি তাহলে যদি ও আবার এখানে আসে? আর যদি বাবা দেখে ফেলে? তিল থেকে তাল হবে মানসম্মান যাবে। সবাই হয়তো আঙ্গুল তুলবে আমার দিকে।
নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করলাম।আচ্ছা সব বাদ দিয়ে যদি দেখা করি তাহলে কি হবে। সব সত্যি বলবো? সত্যি বললে কি হবে?
সত্যি বলবো নাকি ও কি কি বলে শুনবো? ঐ বা কেনো সব স্বাভাবিক দেখাতে চাইছে? কি চায় ও?এসব চিন্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সারাটা রাত নির্ঘুমে কেটে গেলো। যতোটুকু সুস্থ হয়েছিলাম। নিজেকে শক্ত করেছিলাম। তাও এখন নড়বড়ে। এতোক্ষণ যন্ত্রণায় পুড়ছিলাম। এখন ভয় পাচ্ছি।মানসম্মানের ভয়।কখন কে দেখে ফেলে। কখন যে কার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সারাদিন ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম রাফির মুখোমুখি হবো। ভালোবাসার মানুষ আর বিশ্বাস দুটোই আমি হারিয়েছি।হারানোর কিছুই নেই আমার।মানসম্মানটা অন্তত বাঁচুক। আমি সাহসের সঞ্চয় করলাম।
----
আমি রাফিকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ লেকের কাছে আসতে বললাম। রাফি ঠিক কি কারণে বিয়ে করেছে আমার জানা নেই। অনেক লোভী পুরুষ থাকে যারা মনে করে বউ/গার্লফ্রেন্ড এর চেয়ে পরনারী সুন্দর। তাই বউ রেখে বিয়ে করে।আবার অনেকে গালফ্রেন্ডকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য নারীকে বউ করে। কেনো যেনো মিস ডায়নার কথাটা খুব মনে পড়ছিলো। "মিস ডায়না ছিলো সবদিকেই সুন্দরী।তার স্বামী যখন প'রকী'য়ার কথা তার কাছে স্বীকার করেছিলো।এরপরে সে একটি গাউন পড়ে লন্ডনের একটি প্রো'গ্রা'মে গিয়েছিলো। ড্রেসটিকে রিভেঞ্জ ড্রেস বলা হয়।তিনি তার পারসোনাল মেকআপ আর্টিস্টকে বলেছিলেন। আজ তাকে যেনো এমন ভাবে সাজানো হয় যাতে সবাই বলে আমি ই বেষ্ট। আমার হাজব্যান্ড আমাকে চুজ করেনি। দোষটা আমার না তার। রিভেঞ্জ আসলে এভাবেই নিতে হয়। নিজেকে দূ'র্ব'ল করে নয় নিজেকে বেষ্ট করে গড়ে তুলে রিভেঞ্জ নিতে হয়।"
আমিও সূত্রটি ফলো করলাম।
আমার ভেতরেও ব্যাথা মোমোর আলোর মতো টিপটিপ করে জ্বলছিলো। শুধু মনে হচ্ছিলো রাফিও সুন্দরের লোভেই যদি অন্যনারীকে বিয়ে করে থাকে। তাহলে আজকে আমি তার সামনে গিয়ে তাকে আ'মৃ*ত্যু ভোগাবো। আফসোসের বন্যা বইবে জীবনের শেষ প্রান্তেও। এটিই হবে আমার প্রতিশোধ।যদিও আমার দূ'র্ব'ল শরীর। তবুও মনের জোড় নিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করলাম।তার সামনে কখনো শাড়ি পড়া হয়নি। প্রতিপক্ষের সামনে কখনো দূর্বল হতে নেই। হতে হবে কন্ফিডেন্ট আর স্ট্রং। যাতে দেখেই প্রতিপক্ষ দুধাপ পিছিয়ে যায়।
গোলাপী ব্লা*উজের উপর সু'ভ্র সা'দা শাড়ি পড়লাম, গলায় পড়লাম পাতলা চেইন। কানে ছোট্ট দুটো দুল।ডায়মন্ড কার্টের সাদা স্টোনের মায়ের চুড়ি জোড়া পড়ে নিলাম।নিতম্ব ছোয়ানো চুল গুলোকে স্বাধীন করে উড়তে দিলাম। খোলা চুলে কখনো বাইরে যাইনি। কিন্তু আজ যে আমাকে সুন্দর লাগতেই হবে। সুন্দরের খোঁজে যে পুরুষ আমাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করলো। তার চোখে আমাকে বিশ্বসুন্দরী লাগতে হবে। যেনো সে আ'মৃ*ত্যু আফসোস করে।
আমি বিকেল পাঁচটা নাগাদ লেকের পাড়ে দাঁড়ালাম। সে সময়মতো পৌঁছালো। আমি তার চোখে তাকাতে পারছিলাম না। প্রতারককে দেখে আমার বু'ক কাঁপছিলো। পরের পর্ব গুলো নিয়মিত অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছে।
বাকি পরের পর্বে......?
Comments
Post a Comment