একটা রিকশাওয়ালার গল্প ( পর্ব ১ )

 আমার বউ বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করার পর থেকে রাস্তাঘাটে চলাচল করা আমার জন্য দায় হয়ে গিয়েছে। সারাদিন কাজ করার পর রিকশাটা নিয়ে সবে বাড়ির দিয়ে রওনা দিয়েছি। এমন সময় এলাকার এক ভাই আমাকে ডেকে বললেন,--" কি রে আকাশ সারাজীবন কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে বউকে বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে ফল কি অন্য কাউকে খাওয়াবি নাকি? তোর বউ তো তোকে রেখে চলে গেলো বলে। আমাদের কথা মিলিয়ে দেখিস।" সারাদিন রোদের ভিতর রিকশা চালিয়ে এখন শরীরে বিন্দুমাত্র বল শক্তি নেই। তাই কারো সাথে তর্ক করতে গেলাম না। মুচকি হেসে বললাম, " আমাকে রেখে চলে গেলে আর কি করবো ভাই বলেন। আমি না হয় আর একজনকে বিয়ে করে সুখে থাকবো। " কথাগুলো বলে সোজা বাড়ির রাস্তা ধরলাম। আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছি। আজ মিথিলা প্রথম চাকরিতে যোগদান করেছে। ও-র অনেক শখ ছিলো একটা নীল শাড়ির। অভাবের সংসারে কখনোও-র শখ আল্লাদ পূরণ করতে পারিনি। তাই আজ অনেক কষ্ট করে বেশ কিছু টাকা রোজগার করেছি। আজ মিথিলার সব থেকে বড় ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে। আজ ও-র ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোও আমি পূরণ করে দিবো। বড় বাজার থেকে বেলিফুলের মালা আর ছয়টা গোলাপ কিনে এনেছি। আর সাথে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি। সব মিলে প্রায় হাজার দুই টাকা লেগেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুপুরে খাওয়ার টাকাটা জমিয়ে এসব কিনতে পেরেছি। আজকাল একদিনে এতো টাকা রোজগার করা প্রায় অসম্ভব। খুব খুশি মনেই ঘরে ফিরছিলাম কিন্তু মাঝ পথে মনটা বিষিয়ে গেলো। মনের ভিতর না চাইতেও নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আচ্ছা মিথিলা চাকরি করতে গিয়ে বদলে যাবে না তো? তখন কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমাদের এই নয় বছরের সংসার জীবন ভুলে যাবে? না না এসব আমি কি ভাবছি! মিথিলা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমার জন্য কত শখ আল্লাদ মাটিতে পুঁতে ফেলেছে তা আমার অজানা নয়। এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির সীমানায় চলে এসেছি নিজেই বুঝতে পারিনি। রিকশাটা জায়গা মতো রেখে উপহারগুলো হাতে নিয়ে বাড়ির ভিতরপ্রবেশ করলাম। মিথিলা এসব দেখলে কতটা খুশি হবে ভাবতেই খুব আনন্দ লাগছে। আমাদের বাড়িটা কাঠের তৈরী উপরে টিনের চাল। মা বাবা অনেক আগেই মারা গেছে তবে আব্বার বাড়িটা ছিলো তাই থাকার তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। ঘরে ঢুকে দেখলাম মিথিলা ঘুমিয়ে আছে। আগে-পরে কখনো মিথিলা আমি বাড়িতে না আসলে ঘুমাতো না। তাহলে আজ হঠাৎ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাত্র আটটা বাজে। হয়তো অফিসে গেছিলো তাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাড়ি

ফিরেছে সেই বিকেলে এখনও ঘুমিয়ে আছে তাহলেতো অনেক ঘুমিয়েছে। উপহারগুলো সাথে সাথে দিতে না পারলে কি উপহার দেওয়ার মজা থাকে নাকি! আমি আস্তে করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, " মিথিলা অনেক ঘুমিয়েছ তো। এখন ওঠো। " মিথিলা চোখ বন্ধ রেখেই বললো, " কোথায় অনেক ঘুমিয়েছি? মাত্রই শুয়ে পড়লাম। তুমি রাতে খেয়ে নিও।" খুব কষ্ট পেলাম ও-র কথাগুলো শুনে। আগে পরে কখনো এমন ব্যবহার করেনি তাই মানতে একটু কষ্টহচ্ছে। তবুও নিজেকে সংযত করে বললাম, " দেখো আমি তোমার জন্য নীল শাড়ি, বেলি ফুলের মালা আর গোলাপ এনেছি। এগুলো দেখে তারপর ঘুমিয়ে যেও।" মিথিলা বেশ বিরক্ত হয়ে বললো, " দেখো এমন হাজার হাজার নীল শাড়ি, সস্তা ফুল কিনতে পারবো আমি এখন। তুমি আমাকে বিরক্ত করো না তো। চাকরি তো করোনি কখনো তাই জানো না ঠিক কতটা কষ্ট করতে হয়। " মিথিলার কথার উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। ওর সাথে ঝগড়া করতে আমার ভালো লাগে না তাই চুপচাপ জিনিসগুলো টেবিলের উপর রেখে দিলাম। এতো সময় ক্ষুধায় পেট চো চো করলেও এখন যেন তা বাতাসে মিলিয়ে গেছে। যে মেয়ে নয় বছরের বিবাহিত জীবনে কখনো আমাকে রেখে খাবার খায় না সে আজ এতো সকালে আমাকে রেখে খাবার খেয়ে নিলো। কি জানি হয়তো ক্ষুধা লেগেছিলো অনেক। ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে অনেক। ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু বারবার মাথায় কি সব উল্টো পাল্টা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এক গ্লাস পানি খেয়ে গরথেকে বেরিয়ে এলাম। ঘরের সামনে বারান্দার মতো করা। মাটি দিয়ে তৈরী আর কি। এই বারান্দায় বসে কত গল্প করেছি আমরা দুইজন। সেবার মিথিলার পরীক্ষার ফি দিতে হবে আর বই কিনতে হবে বলে তিন হাজার টাকার দরকার ছিলো। কিন্তু কিছুতেই টাকা জোগাড় করতে পারছিলাম না। অবশেষে এক লোকের কিছু জিনিস শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিলে এক হাজার টাকা দিবে বললো। তখন রাত দশটা বাজে। বাড়িতে ফিরে আসবো বলে সব গুছিয়ে রাখছি। কিন্তু ও-র পরীক্ষার ফি দিতে হবে বলে রাজি হয়ে গেলাম। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরতে প্রায় তিনটে বেজে গেছিলো, সেদিন মিথিলা এই বারান্দায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো।

All reactions:
10K

Comments

Popular posts from this blog

পিচ্ছি কালের গুন্ডি বউ (পর্ব:-১ )

বিধবা মহিলা পর্ব ২ (শেষ পর্ব )