ভাই ও বোন

 দোস্ত মালটা কে রে?

রাজু : জানিনা। এলাকায় নতুন মনে হয়....
-আরে বাল রোজই তো ব্রীজে বসে কলেজ ছুটির টাইমে আড্ডা দেই। কিন্তু এই কালারের বোরকা পরা কোনো মেয়েকে তো দেখিনি, আজই প্রথম দেখলাম।
রাজু : যাই বল মালটা কিন্তু হেব্বি।
-মামা ফিগার দেখছিস? একদম উপরে ৩৪ মাঝখানে ৩২ নিচে ৩৬।
রাজু : বলিসনা রে খাইতে ইচ্ছে করতেছে।
-এইযে সেক্সি ফিগারটা কে বানাইছে বয়ফ্রেন্ড? আমরা এলাকার ভাই আছি তো। আমাদের দিকে একটু নজর দাও। তুমি চাইলেই ৩২ কে ৩৬ করে দিতে পারবো।
.
সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি করে ছেলেটা। স্কুল, কলেজের মেয়েদের ইভটিজিং করে। যাইহোক যে মেয়েগুলোকে একটু আগে ইভটিজিং করলো
তারা চলে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর রাহুলের ফোনে কল আসলো....
.
রাহুলের মা : বাবা তুই কই?
-কি হইছে মা? তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন, কান্না করছো কেন?
রাহুলের মা : রুমি আর নেই। -মানে....
ফোনের ওপাশ থেকে মায়ের মুখে কথাটা শোনার পরে আকাশ ভেঙ্গে পরে রাহুলের মাথায়। রুমি তার একমাত্র আদরের ছোট বোন। রুমি ওর কলিজার টুকরা। সেই রুমি নাকি মারা গেছে। রাহুল এটা কেমনে মানবে? এক দৌড়ে বাসায় আসে রাহুল। পুরো আঙ্গিনা লোকজনে ভর্তি। কান্নার রোল পরে গেছে। রাহুল নিজেও কাঁদছে। হঠাৎ পাশে থাকা রাহুলের বন্ধু রাজু জিজ্ঞেস করে....
রাজু :এ্যান্টি কিভাবে কি হলো?
-জানিনা বাবা। কলেজ থেকে একটু আগে ফিরলো। কান্না করতে করতে ঘরে ঢুকে আর বের হলোনা আমার রুমি ।
রাজু : রাহুল ভেঙ্গে পরিসনা। রুমির ঘরে চল তো। নিশ্চয় কোনো কুলু পাওয়া যাবে। রাজু আর রাহুল সোজা রুমির ঘরে যায়। ঘরে গিয়ে দেখতে পায় রুমির পড়ার টেবিলে একটা চিরকুট বই চাপা দেয়া। রাহুল সেটা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে। চিরকুটে লেখা ছিল....
.
জানিস ভাইয়া আমাকে অনেকে তোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিতো তুই নাকি খারাপ। তুই নাকি মেয়েদের ডিস্টার্ব করিস। জানিস সেদিন আমার বান্ধবী মুন্নির সাথে এটা নিয়ে ঝগড়া হইছিল। মুন্নী আমার সাথে কথা বলেনা। কথা না বললে আমার
কি? কেন ও আমার ভাইয়ার নামে মিথ্যে বদনাম করবে? আমার ভাইয়া কি সেরকম নাকি? আমার ভাইয়া ভাল ভাইয়া। আমার ভাইয়া পৃথিবীর সেরা ভাইয়া। ভাইয়া বিশ্বাস কর উপরের এই কথাগুলো এখন থেকে ১ ঘণ্টা আগেও আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম রে ভাইয়া। ভাইয়া জানিস তোর দেয়া আমার জন্মদিনের সেদিনের ট্রিটের টাকাটা আমি নষ্ট করিনি। তোর জন্য একটা হাত ঘড়ি কিনেছিলাম। ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারে রাখা আছে। কিন্তু প্লিজ এটা পরিসনা। আমার হাতে কেনা কিছু পরার অধিকার তুই হারিয়ে ফেলছিস ১ ঘণ্টা আগে। ও হ্যাঁ আসল কথাই তো বলিনি আমি সেই টাকা দিয়ে একটা নতুন বোরকা কিনেছিলাম। তুই তো জানিস বোরকা আমি অনেক পছন্দ করি যাই হোক এসব কথা তোকে বলে আর লাভ নাই।
.
কলেজ থেকে আসার সময় ব্রীজের উপর নতুন যে, মেয়েকে দেখে তুই মাল, সেক্সি বলেছিলি সেটা আমি ছিলাম রে ভাইয়া। তোর দেয়া টাকা দিয়ে কেনা নতুন বোরকা পরেছিলাম বলে তুই আমাকে চিনতে পারিসনি। কিন্তু আমি তোকে আজ চিনতে পেরেছি রে ভাইয়া। খুব ভাল করে চিনতে পেরেছি। ভাইয়া বিশ্বাস কর আমি মানতে পারতেছিনা রে। আমার ভাইয়া এমন? আমি তোর মুখের দিকে কিভাবে তাকাবো বল ভাইয়া? তুই ঐ মুখ দিয়ে কি কি বলছিস আমায়। ভাইয়া রে আমি পারবনা রে। আমি এই মুখ তোকে দেখাতে পারবনা রে ভাইয়া। আমি সেজন্য চলে যাচ্ছি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। তুই বলতিস না আমি তোর কলিজার টুকরা।
.
ভাইয়া রে আমি তোর বোন তাই তোর কাছে আমি কলিজার টুকরা। কিন্তু আর যাদের ইভটিজিং করিস তারাও তাদের ভাইয়ের কাছে কলিজার টুকরা। ভাইয়া আমি জানি তুই আমাকে না চিনে এসব বলেছিস। প্লিজ ভাইয়া আর কোনদিন কাউকে এসব বলবিনা। আমি তো চলেই যাচ্ছি আমাকে আর ফিরে পাবিনা। সব
মেয়েদের মাঝে আমাকে খুজে নিস তোর বোন হিসেবে। জানি এখন তুই কাঁদতেছিস। কাঁদিসনা ভাইয়া। আমিও সারা রাস্তা কান্না করছি। ভাল থাকিস ভাইয়া, আমাকে ক্ষমা করে দিস।
........শিক্ষা.........
নিজের বোন কলিজার টুকরা অন্যের বোন মাল। এমনটা নয় রে ভাই, চলেন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাই। বোন তো বোনই হোক সেটা অন্যকারো বোন। ভাই হিসেবে আমাদের দায়িত্ব প্রতিটা বোনের নিরাপত্তা দেয়া।আর এখন উপলব্ধি করতে পারি ফেসবুকে কুড়িয়ে পাওয়া ছোট বড় দুই-একটা বোনের জন্য। নিরাপদ থাকুক প্রতিটি বোন..

Comments

Popular posts from this blog

পিচ্ছি কালের গুন্ডি বউ (পর্ব:-১ )

একটা রিকশাওয়ালার গল্প ( পর্ব ১ )

বিধবা মহিলা পর্ব ২ (শেষ পর্ব )